অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সৌদি আরবের একটি আদালত দেশটির বিশিষ্ট ধর্ম প্রচারক, আলেম, রাজনীতিবিদ এবং চিন্তাবিদ আওয়াদ আল ক্বারনিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২০১৭ সালে তাকে গ্রেফতার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি আরবের মুহাম্মাদ বিন সালমান ২০১৭ সালে যুবরাজ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, প্রতিবাদী ও বিরোধীদের নির্মূল করার লক্ষ্যে আদালত ও মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করছেন যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সৌদি সরকারকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একনায়কতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলোর অন্যতম বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। দেশটির রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীসহ সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনেক ব্যক্তিকে অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে এবং গুম করে ফেলাসহ নানা ধরনের নির্যাতন বা জেল-জুলুমও অব্যাহত রয়েছে বলে নানা রিপোর্ট আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আওয়াদ আল ক্বারনি সৌদি আরবের সংস্কারকামী নেতৃবৃন্দের অন্যতম। তিনি দেশটির নানা নীতিতে সংস্কার আনার, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম-অবিচার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আরব বিশ্ব ও ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট নীতি অবস্থান নিয়েছেন। গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি ক্বারনি ইসরাইলি পণ্য ব্যবহার ও বিশ্বের যে কোনো স্থানে ইসরাইলি পণ্য ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লেনদেন করাকেও হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন একজন নীতিবান ব্যক্তি ও আলেমের বিরুদ্ধে সৌদি সরকার সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহায়তা তথা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে বিভ্রান্ত চিন্তাধারার প্রচারক ও সৌদি কর্মকর্তাদের সমালোচক বলে দাবি করছে। ক্বারনি সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে ও জনগণকে উদ্বিগ্ন করে দেশের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদি আরবে ক্বারনির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কেবল টুইটারে তার বিশ লাখ অনুসারী রয়েছে। একজন প্রভাবশালী আলেম বলেই সৌদি সরকার ক্বারনিকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। একজন সৌদি চিন্তাবিদ এ বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন: ক্বারনি যদি অন্য অনেকের মত সরকারের মোসাহেবিতে লিপ্ত থাকতেন ও ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা না করতেন তাহলে তিনি উচ্চ পদস্থ সরকারি পদে থাকতেন ও বিলাসবহুল রাজকীয় প্রাসাদের অধিকারী হতেন। কিন্তু তিনি বাস্তবতা বা সত্য তুলে ধরতে গিয়ে এখন মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি।
সৌদি আরবে এমন একজন বড় আলেমকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করা সত্ত্বেও মানবাধিকারের দাবিদার পশ্চিমা সরকারগুলো নীরব রয়েছে! ইরানে রাস্তাঘাটে নারী ও শিশুদের হত্যাকারী দাঙ্গাবাজদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে এইসব সরকার কুম্ভীরাশ্রু ফেললেও সৌদি আরবে বড় বড় ধর্মীয় নেতা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ব্যাপারে তারা নীরব রয়েছে।
নানা রিপোর্টে জানা গেছে সৌদি আরবে ২০২১ সালের তুলনায় মৃত্যুদণ্ড দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর কাছে মানবাধিকারের চেয়ে সৌদি অর্থই বেশি আকর্ষণীয়!
Leave a Reply